শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২০ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম:
সিপাহী বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে মুলাদীর সোনামদ্দিন বন্দরে বিএনপির আলোচনা সভা মুলাদীর চর বাটামারা জমির দখল পাচ্ছে না খোরশেদা আক্তার ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ২০২৪ এর পুনর্জন্ম : উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেনের সাথে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সাক্ষাৎ মিথ্যা মামলার হয়রানি থেকে মুক্তি চায় আলি আকবার পরিবারবর্গ জলবায়ু পরিবর্তন রোধে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে : উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান অর্ন্তবর্তী সরকারের অন্যতম কাজ শহীদ পরিবারকে সহায়তা ও আহতদের পরিপূর্ন চিকিৎসা : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা আবারো এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব হলেন সালাহ উদ্দীন রাজ্জাক যৌথ অভিযানে ভোলায় অস্ত্রসহ দুই ডাকাত আটক নারীর প্রতি সহিংসতা সামজিক ব্যাধি দুর করতে হবে : উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ

পঞ্চগড়ের ঝলই হাট-নয়নীব্রুজে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ত্রাস “শিয়ালু ও বোয়ালু ” মাহাবুব বাহিনী

ধারাবাহিক সারাদেশ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন 

 পর্ব – ২য় 

এই সন্ত্রাসী ” বোয়ালু বাহিনী ” মূলত ,আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার প্রক্কালে জন্ম নেওয়া একটি স্থানীয় ত্রাস বাহিনী। “বোয়ালু মাহাবুব ” বাহিনীর জন্ম ২০০৭ সালে শুরুতে। এই সন্ত্রাসী সদস্য সংখ্যা ২০/২৫ জন । যদিও তাদের বিস্তৃতি বেড়ে এখন ২/৩ টি ইউনিয়ন ছেয়ে গেছে। তবে কমান্ড চলে আগের স্থান ঝলই-নয়নীব্রুজ থেকেই । এই ভয়ংকর বাহিনীর কয়েকটি স্তর রয়েছে। একটি নেগুশিয়েটর ( অভিবাবক মিমাংশাকারী ) স্তর , কার্যকর উপদেষ্টা স্তর , কমান্ডিং স্তর ও আক্রমন ভাগ। এই গ্রুপের নেগুশিয়েটর ( অভিবাবক মীমাংশাকারী ) (এর নামের তালিকা সম্পন্ন নয় বিধায় আরেকটু যাচাই করে প্রকাশ করব পরের পর্বগুলোতে ) জানা যায় এই বাহিনীর কার্যকর উপদেষ্টা “শিয়ালু হায়াত ” মাষ্টার , কমান্ডিং স্তরটি বোয়ালু মাহাবুব একাই নিয়ন্ত্রন করে। আক্রমন ভাগে থাকে বোয়ালু মাহাবুবের ভাই মচুয়া রউফ , সুমন ওরফে চূল ঝুলা সুমন , সুমারু, রেঞ্জার ,সূজন, আনিসুর, মফিজ,নূরুল হক,নূরুল আমিন, ভূট্টো,সৌদ,দুলাল,আশরাফুল,খাদিমূল,ইন্‌তু,ধীরেন ও খলিল প্রমূখ । উল্লেখ্য প্রয়োজনে মহিলাদেরও ব্যবহার করা হয় । ( কাভার পেজে একটি আক্রমনের চিত্র দেয়া আছে )

এই বোয়ালু মাহাবুব বাহিনীর অপকর্মের ধরনগুলো স্থানীয়, মাদক ব্যবসায়ী ও ভূক্তভূগীদের কাছ থেকে জানা যায় , তারা মাদক ব্যবসা , ভূমি দখল ও দস্যুতা,চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ,অপহরণ, যে কোন ব্যক্তির ঘরে অজান্তেই বা কৌশলে চিহ্নীত নারী প্রবেশ করিয়ে নারী নির্যাতন মামলার ভয় এবং প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে জরিমানা আদায় ও শালিশের নামে জোড়পূর্বক চাঁদাবাজি ইত্যাদি কর্মের সাথে। এই বাহিনীর কার্যকর উপদেষ্ঠা শাহ্‌ সেকান্দার হায়াত মাষ্টার ওরফে ” শিয়ালু হায়াত “। শিয়ালু অর্থ শিয়ালের ন্যয় ধূর্ত প্রাণী বিশেষ। এই হায়াত মাষ্টারের শিয়ালু নাম ধারণের অনেক তৎপর্য আমাদের অনুসন্ধানী টিমের সামনে এসেছে।

কথিত শিয়ালু ওরফে হায়াত মাষ্টার মূলত উঠতি জীবনে ছিল জুয়ারী,নারী নিগৃহকারী, ছেচর ও লাফাঙ্গা বিশেষ বলে জানা গেছে। বাবার তেমন অর্থ সম্পদ না থাকলেও নিজে জুয়া এবং নারী উত্যাক্ত করে বেড়াত সারাক্ষন। জুয়া খেলতে গিয়ে নিজের বাবার পকেট কাটার পাশাপাশি অন্যের ছাগল-মুরগী চুরি করত বলে স্থানীয় ভাবে প্রচলিত আছে এমন কথা। এমন কি তারা ভাইয়ের সাইকেল চুরি করে ; তা বন্ধক রেখে জুয়া খেলেছে কিন্তু জরিমানা দিয়েছে তার বাবা।

“শিয়ালু হায়া্ত” এর বড় চারিত্রিক ত্রুটি ছিল নারীদের উত্যাক্ত এবং যৌন নিপীড়ণ করা। এলাকার নারীদের উত্যক্ত করতে করতে এক সময় নিজের বাড়ীতে হানা দিয়ে ভাইয়ের বৌকে নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় গনমান্য ব্যক্তিদের হস্তক্ষাপে তা আপষ রফা হয় বলে জানা যায়। এলাকায় জনশ্রুত আছে ২০০০ সালে এই ” শিয়ালু হায়াত” নাকি নিজের গন্ডি পেড়িয়ে, পাশের জেলা ঠাকুরগাও রোডে গিয়ে নারী ঘটিত একটি অপকর্ম করেছিল। সেখানে তাকে ধরে মাথার চূল ন্যাড়া করে স্থানীয়রা। পরে জুতার মালা গলায় পরিয়ে ঘুড়িয়ে ছেড়ে দিয়েছিল। সেই মাথা ন্যাড়ার ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে নিজেকে লুকাতে নাকি নানান ফন্দি ফিকির শুরু করেছিল সে। কথিত আছে সেই সময় থেকেই নাকি এলাকার মানুষ তাকে শিয়ালু নাম ডাকে।

” শিয়ালু হায়াত” ২০০৩ সালে তার ঝুলিতে যোগ হয় ছাত্রী ধর্ষণের ন্যয় গুরুতর অপকর্ম। তার নিজের স্কুল নয়নীব্রুজ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ( আধূনা বেসরকারী প্রাঃ বিদ্যালয় ) ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রী ধর্ষণ করে। পরে গোপন শালিশের মাধ্যমে প্রভাবশালীরা মিমাংশা করে দেয়। সেই থেকে লেখা-পড়ার পাঠ চুকে যায় ধর্ষিতার। ২০০৬ সালে জোতদেবী কান্ত প্রাঃ স্কুলের শিক্ষক জতিষ মাষ্টারের সাইকেল চুরি করে জরিমানা দেয় বলে জানা যায়।

“শিয়ালু হায়াত ” এর ছাত্রজীবন নাকি কেটেছে ছাত্র-শিবির ও ছাত্রদল ঘরনাযর রাজনীতিতে । যার ফলশ্রুতিতে সে কর্ম জীবনে কৃষক দলের ইউনিয়নের ব্লক পর্যায়ের নেতা বা সভাপতি বনে যায়। বিএনপি জোট ক্ষমতায় আসার পর বেপরোয়া হয়ে উঠে ” শিয়ালু হায়াত “। তার কূটচাল এবং অত্যাচারে আওয়ামী লীগ তথা সেই সময়ের বিরোধীরা কোণঠাসা হয়ে পরেছিল। শেখ হাসিনা সরকারের আওয়ামী লীগ ২য় দফায় ক্ষমতায় এলে সে কিছুদিন এলাকা ছাড়া হয়েছিল বলে জানা যায়। শুধু তখন সে রুটিন মাফিক স্কুলে হাজিরা দিয়ে পালিয়ে থাকত। সেই সময়ের ” বোয়ালু মাহাবুব ” এর সানিধ্যে আসে নিজেকে রক্ষার জন্য । উল্লেখ্য আমাদের প্রতিবেদনে ১ম পর্বে উল্লেখ্য এসপি হারুনুর রশীদের ঘোষিত “জন হুলিয়া” এর ১১ জনের তালিকায় তার নাম ছিল ২য়। মূলতঃ আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের শেষের দিকে সে স্থানীয় তার রাজনৌতিক মুরুব্বী ও জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের ঝলই শালশিড়ি ইউনিয়নের সভাপতি আবুল চেয়ারম্যান দলত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগ দিলে , তার হাত ধরে ” শিয়ালু হায়াত ” আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে নিজেকে জড়াতে তৎপর হয় এবং সকল অপকর্ম চাপা দিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের শেল্টারে চলে যায়। ( এই আবুল চেয়ারম্যানের সাথে প্রচলিত নাম ” শিয়ালু-বোয়ালু”দের বর্তমানে কি সম্পর্ক তা আমরা পরে আসব।)

ঝলই-নয়নীব্রুজের মানুষ হায়াত মাষ্টারকে কথিত শিয়ালু নাম দিলেও বাস্তবে সে তাদের সেই নামকরণের সন্মান অক্ষরে অক্ষরে রেখেছে “বোয়ালু মাহাবুব ” বাহিনীর কার্যকর উপদেষ্টা হয়ে। মূলত ঘটনা বা বিষয় নির্বাচন যেমন- কার জায়গা জমিতে সমস্যা আছে , কে হঠাত অর্থকরির মুখ দেখেছে , কার সাথে কার ঝামেলা আছে। এমন সব গবেষণা করে আক্রমনের উপায় ও কৌশোল বাত্‌লে দেওয়াই তার কাজ। মূলতঃ “শিয়ালু হায়াত “; মাষ্টার হওয়ার সুবাদে অভাবী মানুষগুলো তাকে জ্ঞাণী মনে করেই বুদ্ধি নিতে আসে। ফলে প্রতিপক্ষের দূর্বলতা তার বুঝতে কষ্ট হয় না। শিয়ালু হায়াতের প্রতিপক্ষের এই দূর্বলতাকেই বোয়ালু বাহিনীর আক্রমণের ইস্যু হিসেবে কাজ করে এবং তারা সফল হয়। আর এই কর্মে নিয়োজিত থেকে সে স্কুলে সময় দেয় না। আমাদের টিম উপস্থিত হয়েছিল একবার তার নয়নীব্রুজ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে তাকে স্কুল চলাকালীন সময়ে পাওয়া যায় নাই। তার সাথে যোগাযোগ হলে স্কুলে অনুপস্থিত কথা অস্বীকার করেন ।তাকে কমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা তার স্কুলে অনুপস্থিতির সততা নিশ্চিত করে।

আমাদের অনুসন্ধানী টিম নয়নীব্রুজ এবং ঝলই গিয়ে অনুসন্ধানে যার অনেক কিছুরই প্রমান পায়। ” শিয়ালু হায়াত “, এই মাত্র কিছুদিন আগে নয়নীব্রুজ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক থাকা কালীণ সময় স্কুল ফান্ডের টাকা স্কুল সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে আত্মসাৎ করেন। স্কুল সভাপতি নিরুপায় হয়ে উপজেলা এবং জেলা শিক্ষা অফিসে আবেদন করলে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই তদন্ত কমিটি ঘটনা সততা পেলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রজ্জু হয় বলে প্রকাশ হয়েছে।

(বিঃ দ্রঃ- প্রতিবেদন পরবর্তিতে আসছে ভিডিও ডকুমেন্টারী )

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2017 ithostseba.com
Design & Developed BY Hostitbd.Com
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com